ভ্রমণ আড্ডা, এবার পুজোয় বা শীতে "তাবাকশী"
শোভন নন্দী: এবার পুজো বা শীতের ছুটির স্লোগান হোক হোম স্টে অভি-যান।শহরের দূষণ,কোলাহল, কংক্রিটের জঙ্গলকে পিছনে ফেলে এবারের সফর হোক একটু অন্য স্বাদের।
চিরাচরিত হোটেল-রিসোর্ট এড়িয়ে একটু নিরিবিলি ছবির মতো সুন্দর কোনো পাহাড়ি গ্রামের নির্মল দূষণমুক্ত পরিবেশ হোক ছুটির ঠিকানা,ঠিক যেন চিত্রকরের দক্ষ হাতে আঁকা ক্যানভাস থেকে উঠে আসা কোনো ছবি, এই রকম কয়েকটি পাহাড়ী নিসর্গের ঠিক-ঠিকানা। খুব দূরে নয়,যাওয়া-আসার ঝক্কি কম,হাতে পাঁচ-ছয় দিন সময় থাকলেই হলো।
প্রথম গন্তব্য হলো,মিরিকের আট কিমি. দূরের পাহাড়ী গ্রাম তাবাকশী। হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে এন. জে. পি যাবার অনেক ট্রেন,তার একটাতে চড়ে পর- দিন সকাল-সকাল শিলিগুড়ি বাস বা সুমো স্ট্যান্ড পৌঁছে শেয়ারে মাথাপিছু একশোর বিনিময়ে দুঘন্টার যাত্রাশেষে মিরিক বাজার বৌদিরহোটেল, অগ্রিম বলে রাখা সুনাখারী হোমে স্টের পাঠানো গাড়ি চেপে মিনিট কুড়ির মধ্যে পটে আঁকা ছবির মতো তাবাকশী।
পথযাত্রার ক্লান্তি এক নিমেষে উধাও,হোম স্টের গেটে হাসি মুখে অভ্যর্থনায় অপেক্ষারত কর্ণধার মিস্টার রমেশ রাই ও পরিবারের সদস্যরা।ফোনবুক করা স্টোনকটেজ,বাম্বুকটেজ, একমাত্র ট্রি-হাউসের পছন্দের যে কোনটার মালিক আপনি। বন্ধুপ্রতিম বিপ্লবের বদান্যতায় এই অধমের হোম স্টের ট্রি- হাউসে থাকার অভিজ্ঞতা হয়ে ছিল,এক কথায় 'awesome'. চা বাগানের ঘেরাটোপে সোনা খারীর অন্দরসজ্জা,পরিবেশ, খাওয়া-দাওয়া অসাধারণ।
সৌন্দর্য্য ততোধিক বাড়িয়েছে হোম স্টের প্রায় গা দিয়ে বয়ে যাওয়া উচ্ছল যৌবনবতীনারী সুলভ রংভাঙ খোলা,বর্ষায় তার রূপ অসাধারণ।এদিক ওদিক ঘোরা ঘুরি বলতে কাছেপিঠে তাবাকশী ইকো-পার্ক,পার্কের অন্দরে ছোট্ট জলাশয়ে বোটিংয়ের ব্যাবস্থা আছে।আছে সুন্দর কেয়ারী করা উদ্যান,তাতে যেন রঙ্গীন ফুলের মজলিশ বসেছে।অল্প দূরত্বে পাহাড়ের কোলে শোভা পাচ্ছে প্যাগোডা স্টাইলের শিব মন্দির।মাত্র কুড়ি কিমি. দূরত্বে নেপাল বর্ডার পেরিয়ে পশুপতি মার্কেট,যাত্রা পথে বিখ্যাত থারবো টি গার্ডেন ও গোপালধারা টি-গার্ডেনের নিসর্গ অসাধারণ।ওকেই ভিউ পয়েন্ট খুব সুন্দর স্পট,এবার আসি দ্বীতিয় গন্তব্য,মিরিক বাজার থেকে মাত্র চার কিমি, দূরে যমজ গ্রাম স্কুলদাড়া ও জিম্বাগাও।
স্কুলদাড়া রংভাঙ হোম স্টের মালিক সদা হাস্য-ময় দীপঙ্কর গুরুং,হোম স্টে টি তার ব্যাবহারের মতোই সুন্দর। যেন পিকচার পোস্টকার্ড। নামে হোম স্টে, হোটেলের মতো সুখ-সুবিধা বিদ্যমান, উপরি পাওনা নিজের হাতে তৈরি বাগানের অর্গানিক সব্জি ও তার নানান মুখো- রোচক পদ।রংভাঙের অব- স্থান,নিসর্গ ভীষণ সুন্দর।এই যমজ দুটি গ্রামে প্রায় আশিটি পরিবারের বাস এবং প্রতিটি পরিবার নিরামিষ ভোজী।হোম স্টে তেও নিরামিষ পদ পরিবেশিত হলেও রান্নার গুনে আমিষ পদের অভাব অনুভূত হয় না।প্রচুর নাম না জানা পাখির ও প্রজাপতির আনা- গোনা সুতরাং পক্ষী প্রেমিক-দের ছবি তোলার জন্য আদর্শ ঠিকানা।শীতে উপরি পাওনা গাছ নুয়ে পড়া সুস্বাদু কমলা।
এবার আসি যমজের অন্যতম তিরথঙ্কর গুরুঙ্গের হোম স্টের কথায়, স্কুলদাড়ার পাশেই জিম্বাগাও গ্রাম।তরুণ-তুর্কি যুবক তিরথঙ্কর অসীম যত্নে আগলে রেখেছে তার পূর্ব পুরুষের ব্রিটিশদের কাছ থেকে হাতবদল হওয়া হেরি- টেজ বাংলো।হোম স্টের নব-তম বাংলোর সুখ-সুবিধা বেশি হলেও এই প্রতিবেদক কে আকর্ষিত করেছিল ব্রিটিশ-বাংলো।হোম স্টের বাগানটি রঙিন নাম জানা না জানা ফূলে-ফূলে ভর্তি,যেন জলসা বসেছে।প্রচুর প্রজাপতি ও পাখির ওড়া-উড়ি,রংভাঙের থেকে যেন একটু বেশিই। এখানেও প্রচুর কমলা বাগান। শীতকালে গ্রাম দুটি হলুদে-হলুদ।
যারা সহজ ট্রেকিং এ আগ্রহী,তারা উৎরাই পথে ট্রেকিং করে তিন কিমি.দূরের মন্সট্রি ঘুরে আসতে পারেন।কাছেই আছে একটি ছোট্ট চার্চ,পাহাড়ের পট ভূমিকায় অতি সাধারণ স্থাপত্যও অনিন্দ সুন্দর লাগে। চতুর্থ ও এই সফরের শেষোক্ত হোম স্টে টি হলো মিরিকের প্রান কেন্দ্র সুমেন্দু লেক লাগোয়া রত্নগিরি হোম স্টে,এই মুহূর্তে আংশিক চালু,এখনও নির্মাণ কাজ চলছে।
এই প্রতিবেদকে হোম স্টের কর্ণধার ঘুরিয়ে সব দেখালেন,এবং প্রশ্নের উত্তরে জানালেন পুজোর আগেই পর্যটকদের জন্য হোম স্টের দরজা পূর্ণাঙ্গ সাজে উন্মুক্ত হবে। পুজো বা শীতের ছুটিতে এই সফর সারা জীবনের সম্পদ হতে পারে এ কথা হলফ করে বলা যায়।খরচের কথায় আসি,প্রতিটি হোম স্টের থাকা-খাওয়া মাথাপিছু চোদ্দশ থেকে পনেরশ টাকা। সমস্ত রকম জানকারী:বিপ্লব দে :9733454779
প্রতিবেদক: শোভন নন্দী
ছবি: মণিদীপা নন্দী
|| ভ্রমন আড্ডা, স্বাধীনতা দিবসের ছুটিতে বেরিয়ে আসুন "লালকাঁকড়া বীচ" ||
আগামী রবিবার ঠিক বেলা ১১:৩০ এ চোখ রাখুন একনজরে হুগলী চুঁচুড়া - Eknojore Hooghly Chuchura'র সমস্ত সম্প্রচার মাধ্যমে। ভ্রমন আড্ডা আসছে লাল "কাঁকড়া বীচ" ।
আপনিও পাঠাতে পারেন আপনার ভ্রমন অভিজ্ঞতা, WhatsApp করুন এই নম্বরে: 70032 36180(লেখা এবং ছবিসহ), আপনার অভিজ্ঞতা আমরা পৌঁছে দেবো ৬০ হাজার দর্শকের কাছে।
[ ন্যূনতম ৭টি ছবি এবং অধিকতম ১০টি ছবি ]
Comments
Post a Comment