প্রসূন মল্লিক, হুগলী(২৭.০৬.২০১৮) : ভ্রমণবার্তা পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তথা বাংলার ভ্রমণ পত্রিকার জনক শ্রী প্রমোদাদিত্য মল্লিক ১৯৩৫ সালের ২রা জুন হুগলী-চুঁচুড়ার ঘুটিয়াবাজার অঞ্চলে প্রখ্যাত মল্লিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । পিতা গোপেশচন্দ্র মল্লিক ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও নেতাজীর সহকর্মী । মাতা রেনুকা মল্লিক ও ছিলেন বিপ্লবী ভাবধারায় অনুপ্রাণিত । পিতামহ ডাক্তার প্রসাদদাস মল্লিক ছিলেন স্বনামধন্য চিকিৎসক । ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ায় ও বাবা বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের জন্য কারাবরণ করায় পিতামাতার স্নেহ পাননি । প্রমোদাদিত্য চার ভাইবোন । অনেক কষ্টের মধ্যেও তাঁর উচ্চশিক্ষা চালিয়ে গেছেন প্রমোদাদিত্য ।
ADVERTISEMENT |
কর্মজীবনে তিনি কখনও চাকুরীর কথা ভাবেননি । স্বাধীন ব্যবসাকে পছন্দ করতেন । বহুদিন নানা ব্যাবসাও করেছেন । আর তাঁর খুব ভ্রমণের নেশা ছিল ।১৯৭১ সালে প্রমোদাদিত্যর অগ্রজ প্রতাপাদিত্য মল্লিক ও তিনি অক্টোবর মাসে মহালয়ার দিন বাংলার প্রথম ভ্রমণ পত্রিকা " ভ্রমণবার্তা " প্রকাশ করেন ।ভ্রমণ করুন, ভ্রমণের মাধ্যমে দেশকে দেখুন ও জানুন আর সঙ্গে রাখুন একটি পত্রিকা’ – এই আদর্শ নিয়েই ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে প্রতাপাদিত্য মল্লিক এবং প্রমোদাদিত্য মল্লিকের উদ্যোগে বাংলাভাষায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ ভ্রমণ পত্রিকা ‘ভ্রমণ বার্তা’-র জন্ম হয়েছিল।চুঁচুড়ার জোড়াঘাটে গঙ্গার জলছোঁয়া মল্লিক বাড়িতে একটা ট্রাঙ্কের ওপর আরেকটা ট্রাঙ্ক রেখে শুরু হয় পত্রিকার অফিস। রেনু বাগচী, নীতিশচন্দ্র বাগচী, সুভাষ সমাজদার, শম্ভূনাথ দাস, অবধূত, সম্রাট সেন, শঙ্কু মহারাজ, দিলীপ মিত্র, ভূপতিরঞ্জন দাস, প্রবোধ সান্যাল, উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কে না ছিলেন এই পত্রিকা গড়ে ওঠার পেছনে। ১৯৭২ সালে হুগলীতে ভ্রমণবার্তার উদ্যোগে টুরিস্ট ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয় । ভ্রমণবার্তার মূল লক্ষ্য ছিল, পশ্চিমবঙ্গের ভ্রমণের অজানা স্থানগুলি সম্পর্কে সবাইকে জানানো । সুন্দরবনকে ভ্রমণবার্তাই প্রথম প্রচারের আলোয় এনেছিল । এছাড়া শিবনিবাসকেও প্রচারের আলোয় নিয়ে আসেন প্রমোদাদিত্য মল্লিক । আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও নেপালেও ভ্রমণবার্তার টুরিস্ট ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়েছিল । চল্লিশ বছরের দীর্ঘ যাত্রার পরেও ভ্রমণবার্তার প্রকাশ বন্ধ হয়নি । ২০১৩ সালের জুন মাসে হুগলীর জুবলী ব্রিজকে হেরিটেজ ঘোষণা করার জন্য বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর কাছে যান ও ফেরার পথে বৃষ্টিতে ভিজে মাত্র কয়েকদিনের জ্বরে ভুগে মৃত্যুবরণ করেন প্রমোদাদিত্য মল্লিক ২০১৩ সালের ২৭শে জুন । তাঁর এই অমর সৃষ্টি ভ্রমণবার্তা পত্রিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁকে বাংলার ভ্রমণ পত্রিকার জনক বলা হয়ে থাকে ।
এই প্রসঙ্গে প্রতাপাদিত্য মল্লিক মহাশয়ের পুত্র প্রদ্যুৎ মল্লিক বলেন :
" ছোটবেলা থেকেই প্রমোদ কাকার সঙ্গী ছিল এই ভ্রমণবার্তা পত্রিকা । অনেকের মুখে শুনেছিলাম যে , আমার বাবা প্রতাপাদিত্য মল্লিক ও কাকা প্রমোদাদিত্য মল্লিক দুজনে মিলে পত্রিকাটি প্রকাশ করেছিলেন । বাবা ও কাকার দুজনেরই খুব ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ ছিল । কাকা আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও নেপালেও ভ্রমণবার্তার টুরিস্ট ফেস্টিভ্যাল করেছিলেন । বাবা সাইকেলে করে ভারত ভ্রমণ করেছিলেন । সেসব তো ছিলই, কাকা এই ভ্রমণবার্তা পত্রিকার প্রচারের জন্য সাইকেল করে বহু দূরে দূরে পত্রিকাটি বিক্রির দোকানে দিতেন । পত্রিকাটি মাসিক ছিল, পরে পাক্ষিক হয় । কিন্তু কাকার পত্রিকার প্রতিটি লেখা ছিল অসাধারণ । বাংলার বুকে প্রথম ভ্রমণ পত্রিকা প্রকাশ করার জন্য বাবা প্রতাপাদিত্য মল্লিক ও কাকা প্রমোদাদিত্য মল্লিককে জানাই আমার অন্তরের শ্রদ্ধার্ঘ্য "।।
Comments
Post a Comment