পন্ডিত রামগতি ন্যায়রত্ন
রামগতি ন্যায়রত্নের ভগ্নপ্রায় বাড়ি |
শুভদীপ দে : ‘রামগতি ন্যায়রত্ন’ - নামটি আজ অনেকের কাছেই বেশ খটকা লাগার বিষয়বস্তু। একদা বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক রামগতি ন্যায়রত্ন -র ১৮২ তম জন্মদিন পার হল কয়েকমাস আগেই হুগলী জেলার খন্যানের ইলছোবা গ্রামে হলধর চূড়ামনি ও অঙ্গরাদেবীর পুত্র রামগতি বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৩১ সালে ৪ জুলাই বাল্যকালে গ্রামের পাঠশালাতেই শুরু পড়াশোনা। ১৮৪৪ সালে সংস্কৃত কলেজে ভর্তি ‘রামগতি ন্যায়রত্নের’ জীবনে টার্নিং পয়েন্ট। এই কলেজে পড়াকালীন তিনি বিদ্যাসাগরের সংস্পর্শে আসেন। অল্প দিনের মধ্যেই অসামান্য পান্ডিত্যের জোরে বিদ্যাসাগরের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন ১৮৪৯ সালে। জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় অসামান্য ফল লাভের জন্য ৮ টাকা মাসিক বৃত্তি লাভ করেন ১৮৫১ সালে। সিনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় মাসিক ২০ টাকা বৃত্তি লাভ করেন এই কৃতিত্ব। খুব কম বাঙালীরই আছে। ১১ বছর অধ্যায়নের পর ১৮৫৫ সালে বিদ্যাসাগর কর্তৃক ‘ন্যায়রত্ন’ উপাধি পান। তার খ্যাতি ছড়িয়ে পরে সমগ্র বাংলা জুড়ে। ১৮৫৬ সালে ‘হুগলী নর্মাল স্কুলে’ দ্বিতীয় শিক্ষক পদে। যোগদান করেন রামগতি। এই স্কুলে চাকরী গ্রহণ করে তিনি চূড়ার বড়বাজারে বসবাস করতে আরম্ভ করেন। সেই থেকে চুঁচুড়ার সাথে ‘রামগতি’ ন্যায়রত্নের যোগাযোগ। রামগতি ন্যায়রত্ন বাংলা ভাষার একজন প্রবাদ পুরুষ। তার লেখা ১৭ টি গ্রন্থের মধ্যে ‘বাংলাভাষা ও বাংলাসাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব, দময়ন্তীভারতবর্ষের ইতিহাস, গৌষ্ঠী কথাকলকাতার প্রাচীন দূর্গও অন্ধকূপ হত্যার ইতিহাস উল্লেখযোগ্য। বাঙ্গালাভাষা ও বাঙ্গালা সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব গ্রন্থটি সাহিত্য জগতের তিনকালের ইতিহাস সমৃদ্ধ প্রথম বই হিসাবে। আজও সমাদৃত। অন্ধকূপ হত্যার ইতিহাসটি তিনি ক্যাপ্টেন রিচার্ডসনের মূল গ্রন্থ থেকে অনুবাদ করেন। পলাশীর যুদ্ধকালীন এই ইতিহাস বাংলায় অনুদিত হবার ফলে অনেকেরই অন্ধকূপ হত্যা সম্বন্ধে জানতে সুবিধা হয়। রামগতি ন্যায়রত্নকে শুধুমাত্র শিক্ষাবিদ ও লেখকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে। ভুল হবে। তিনি ছিলেন একজন। সমাজসেবকও। জন্মস্থান ইলছোবা গ্রামের প্রতি তার টান ছিল আমৃত্যু। ইলছোবাতে ১৮৬০ সালে ইংরাজী ও বাংলা মাধ্যম স্কুলের সূচনা করেন তিনি। ঐ বছর ২ জুন বিদ্যাসাগর এসেছিলেন স্কুল পরিদর্শনে। খন্ন্যান থেকে ইলছোবা গ্রাম অবধি রাস্তা তৈরীর সবথেকে বড় অবদান এই মানুষটির। খন্যানে ডাকঘর ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরীর প্রধান কারিগর ছিল রামগতি ন্যায়রত্ন। কর্মসূত্রে বহরমপুরে থাকাকালীন সেখানেও একাধিক সংস্কারমূলক কাজে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। নিজেকে তার অন্যতম বড় কৃতিত্ব আজিমগঞ্জ সৌদাবাদ রেললাইন স্থাপনে প্রধান উদ্যোগ গ্রহণ। বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ। প্রস্তাবের অন্যতম প্রস্তাবক ছিলেন। রামগতি এই কথা বিদ্যাসাগরের নিজের লিখিত গ্রন্থেও পাওয়া যায়। এই মহান কর্মযোগী মানুষটি শেষ জীবনে হুগলী নর্মাল স্কুলেই ফিরে আসেন। পাকাপাকি ভাবে থাকতেন। চুঁচুড়ায়। এখানেই মাত্র ৬৩ বছর। বয়সে ১৮৯৪ সালের ৯ অক্টোবর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এই মহান কর্মযোগী মানুষটিকে অনেক বাঙালীই ভুলতে বসেছে।।
■আসছে একনজরে জনমত পঞ্চায়েত ওয়েবসিরিজ■
চোখ রাখুন.... একনজরে হুগলী চুঁচুড়া'য়...
ADVERTISEMENT
নিবেদন করছে :
এবং
সাহিত্যপত্র....
◆ Official Blogpost of Eknojore Hooghly Chuchura ◆
Comments
Post a Comment